সাধারণত কোথাও বাড়ি খেয়ে, হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে, কিংবা কোনো সংঘর্ষ বা খেলার সময় আঘাত লেগে থাকে। শরীরের কোনো স্থানে আঘাত পেলে ওই জায়গা দ্রুত ফুলে যায় এবং ব্যথা অনুভূত হয়। এই ধরণের ব্যথা কে সফট টিস্যু ইনজুরি বলে। সফট টিস্যু বলতে মাংসপেশি, টেন্ডন অথবা লিগামেন্ট ইত্যাদি বোঝানো হয়। অর্থাৎ কোনো কারণে এগুলোতে আঘাত পাওয়াকে সফট টিস্যু ইনজুরি বলে।

হাত-পা থেকে শুরু করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে অপ্রত্যাশিত বা অনিয়ন্ত্রিত মুভমেন্টের ও আঘাতের কারণে টিস্যু ইনজুরির শিকার হই আমরা। আমি ডা. মো: গোলজার আহমেদ সফট টিস্যু ইনজুরিতে ফিজিওথেরাপির ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি। আসুন লেখাটি শেষ পর্যন্ত ধৈর্য সহকারে পড়ি।

• সফট টিস্যু কাকে বলে
• সফট টিস্যু ইনজুরির প্রকারভেদ
• সফট টিস্যু ইনজুরি কাদের বেশি হয়
• আঘাত কখন গুরুতর
• আঘাতের ঘরোয়া চিকিৎসা
• আঘাতে ফিজিওথেরাপি

সফট টিস্যু কাকে বলে

সফট টিস্যু বলতে এমন এক ধরণের টিস্যুকে বোঝানো হয় যারা বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও হাড়ের চারপাশে অবস্থান করে। এই টিস্যুগুলোর কাজ মূলত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও হাড়গুলোর সাথে সংযোগ ও দৃঢ়তা প্রদান করা। সাধারণত কঙ্কাল পেশী (যা আমাদের হাড়ের কঙ্কালের সাথে জুড়ে থাকে) এবং এর সাথে যুক্ত টেন্ডন, লিগামেন্ট, ফাসা, রক্তনালী, স্নায়ু, চর্বি, ফাইব্রাস টিস্যু ও সাইনোভিয়াল মেমব্রেনগুলোকেই সফট টিস্যু বলে বিবেচনা করা হয়।

সফট টিস্যু ইনজুরির প্রকারভেদ

সফট টিস্যু ইনজুরিগুলোকে নিন্মোক্ত ভাবে প্রকারভেদ করা হয়।

• ব্রুসেস: (কালশিটে)
• স্প্রেইনস: (মচকানো)
• টেন্ডোনাইটিস (টেন্ডনের প্রদাহ)
• বার্সাইটিস (বার্সার প্রদাহ)
• স্ট্রেস ইনজুরি (পুনরাবৃত্তিমূলক ইনজুরি)
• স্ট্রেইনস (লিগামেন্টে আঘাত)

সফট টিস্যু ইনজুরি কাদের বেশি হয়

সাধারণত খেলোয়াড়দের সফট টিস্যু ইনজুরি বেশি হতে দেখা যায়। সফট টিস্যু ইনজুরির জন্য অনেক পেশাদার খেলোয়াড়কে খেলাধুলা থেকে ছিটকে পড়তে দেখা যায়। তবে খেলোয়াড় ছাড়াও অন্য যে কারও যেকোনো বয়সে সফট টিস্যু ইনজুরি হতে পারে। সফট টিস্যু ইনজুরি হলে আহত স্থানের টিস্যুগুলো সহ্য সীমার বাইরে চলে যায়।

ইনজুরি কখন গুরুতর

আমরা নিজেরাই বুঝতে পারি কোন আঘাত কতটা গুরুতর। আঘাতের কারণে আক্রান্ত স্থান ফুলে যায়, লাল হয়ে যায়, ব্যথা হয়। অনেক আঘাতে এই লক্ষণগুলো মাত্র কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এই ধরনের ব্যথাকে অ্যাকিউট সফট টিস্যু ইনজুরি বলা হয়। তবে গুরুতর আঘাতে আক্রান্ত স্থান অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ওঠে, লাল হয়ে যাওয়ার বদলে কালচে রূপ ধারণ করে এবং অবর্ণনীয় ব্যথা অনুভূত হয়। এমন আঘাতের ক্ষেত্রে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ইনজুরির ঘরোয়া চিকিৎসা

আঘাতের ঘরোয়া চিকিৎসার একটি চমৎকার টেকনিক আছে। যাকে ইংরেজি ৪টি বর্ণমালা দিয়ে বানানো শব্দ RICE থেরাপি বলা হয়। প্রতিটি বর্ণ দিয়ে শুরু হওয়া শব্দগুলোতেই ঘরোয়া চিকিৎসার আভাস দেওয়া আছে। চলুন দেখি RICE এর মধ্যে লুকিয়ে থাকা সেই শব্দগুলো।

R- Rest, পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিতে হবে
I- Ice, বরফ দিয়ে সেঁক দিতে হবে
C- Compression, আক্রান্ত পেশিতে সহনীয় চাপ দিতে হবে
E- Elevation আক্রান্ত স্থানের নিচে বালিশ দিয়ে শরীরের তুলনায় কিছুটা ওপরে রাখতে হবে।
এভাবে ধাপগুলো মেনে চললে ব্যথায় কিছুটা আরাম পাওয়া যায়। একেই RICE থেরাপি বলে।

ইনজুরিতে ফিজিওথেরাপি

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা আঘাতের জন্য কতটুকু কার্যকর এবং প্রয়োজনীয় তা বোঝানোর জন্য একটি উদাহরণ দিচ্ছি। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, ক্রিকেট, ফুটবল, হকি ইত্যাদি খেলাধুলার যেকোনো পেশাদার আয়োজনে একজন ফিজিও থাকেন। স্পোর্টস ফিজিও হচ্ছেন একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক, যিনি মাঠে খেলতে গিয়ে আঘাত প্রাপ্ত খেলোয়াড়কে দ্রুত সুস্থ করে খেলা চালিয়ে নেওয়ার উপযোগী করেন। অর্থাৎ আঘাতে ফিজিওথেরাপি একটি কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি। এজন্যই খেলোয়াড়গণ তার পেশাদার জীবনের সম্পূর্ণটাই ফিজিওথেরাপিস্টের উপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল থাকেন। তাই যেকোনো আঘাতের জন্য প্রথমেই একজন ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে পরামর্শ নিন।

প্রিয় পাঠক, আশা করি আঘাতের চিকিৎসায় কী করণীয় তার ধারণা আপনি পেয়েছেন। আঘাত বা সফট টিস্যু ইনজুরি নিয়ে যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে কল করুন আমার হেল্প লাইনে অথবা মেসেজ ইনবক্সে। ধন্যবাদ শেষ পর্যন্ত লেখাটি পড়ার জন্য। আপনার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।