আপনি কি ম্যানুয়াল থেরাপি শব্দটির সাথে নতুন পরিচিত, কিন্তু এটা আসলে কী তা জানেন না? ফিজিওথেরাপিস্টের সাথে সেশনের আগে এই বিষয়ে একটু ভালোভাবে জেনে নিতে ইচ্ছে করছে? এই ধরনের থেরাপি নেওয়া কি ঠিক হবে? এমন অনেক প্রশ্ন যদি আপনার মাথায় ঘুরপাক খায় তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য।

আমি ডা. গোলজার আহমেদ এই বিশেষ ধরণের থেরাপি সম্পর্কে খুব সহজ ভাষায় আপনাদের বোধগম্য করে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। এই থেরাপি ফিজিওথেরাপিতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝতে হলে আসুন লেখাটি শেষ পর্যন্ত ধৈর্য সহকারে পড়ি।

• ম্যানুয়াল থেরাপি কী
• ম্যানুয়াল থেরাপির কাজ কী
• ম্যানুয়াল থেরাপির উপকারিতা
• কোথায় নেবেন ম্যানুয়াল থেরাপি

ম্যানুয়াল থেরাপি কী

ম্যানুয়াল থেরাপি, বা ম্যানিপুলেটিভ থেরাপি হলো হাড় ও মাংসপেশির ব্যথা এবং প্রতিবন্ধীতার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ফিজিওথেরাপিস্টদের একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। বলা যায় এই চিকিৎসা পদ্ধতিটিই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের অন্যতম প্রধান অস্ত্র। অনেক ক্ষেত্রেই শুধু এই থেরাপির মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। শুনলে অবাক লাগতে পারে, একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্ট এর মাধ্যমে চোখে দেখা যায় না এমন স্থান বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অবস্থান ঠিক করে দিতে পারেন।

ম্যানুয়াল শব্দের অর্থ হাত দিয়ে করা। তাই ম্যানুয়াল থেরাপি বলতে সেই চিকিৎসাকেই বোঝায় যেখানে কেবল হাতের ব্যবহারই হয়। কোনো মেশিন বা ডিভাইস এখানে ব্যবহৃত হয় না। এটা সম্পূর্ণ একটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি যা কেবলমাত্র প্রশিক্ষিত চিকিৎসকদের মাধ্যমেই প্রদান করা সম্ভব।

ম্যানুয়াল থেরাপির কাজ কী

ম্যানুয়াল থেরাপির অসংখ্য পদ্ধতি রয়েছে। এসব পদ্ধতির অনেকগুলো খুব কম ব্যবহার হয় আবার অনেকগুলো আছে প্রায় সবারই প্রয়োজন। এরকম একটি বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতির নাম সফট টিস্যু ম্যানিপুলেশন। রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী ফিজিওথেরাপিস্টরা দেহের বিভিন্ন সফট টিস্যু যেমন মাংসপেশি, লিগামেন্ট, ও ফাসায় হাতের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করে সফট টিস্যু থেরাপি দিয়ে থাকেন। এতে আক্রান্ত স্থানে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়, শক্ত টিস্যু নরম হয়, ফলে তাৎক্ষণিক ব্যথা কমে যায়।

জয়েন্ট ম্যানিপুলেশন আরেকটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। জয়েন্টের স্বাভাবিক বিন্যাস ফিরিয়ে দেওয়া, মাংসপেশি ও লিগামেন্টের সক্ষমতা বৃদ্ধি, এবং কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জয়েন্ট সারিয়ে তুলতে নিরাপদ মাত্রায় চাপ প্রয়োগ করার প্রক্রিয়া হলো এটি। এতে ব্যথা কমার পাশাপাশি জয়েন্টের সীমিত হয়ে যাওয়া পরিসর বাড়ায়।

অন্যান্য পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে ডিপ টিস্যু ড্যামেজ, যা আক্রান্ত স্থানে জমে থাকা ক্ষতিকর পদার্থ সরিয়ে দিতে পারে। মায়োফেশিয়াল রিলিফ এবং টিগার পয়েন্ট রিলিফ সুনির্দিষ্ট অঞ্চল বা বিন্দুতে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে টিস্যু ও মাংসপেশিকে শিথিল করে এবং তাৎক্ষণিক ব্যথা কমায়। এই পদ্ধতিটি ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোমে আক্রান্তদের জন্য খুবই উপযোগী।

এছাড়াও বিভিন্ন গবেষণালব্ধ পদ্ধতি যেমন মলিগান, ম্যাকেঞ্জি, মিডলাইন, সিরিয়াক্স এপ্রোচ ইত্যাদির মত কিছু টেকনিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকরা প্রয়োগ করে রোগীকে সুস্থ করে তোলেন। এসব টেকনিক নিয়ে পরবর্তী কোনো লেখায় আমি বিস্তারিত আলোচনা করবো।

ম্যানুয়াল থেরাপির উপকারিতা

চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে ম্যানুয়াল থেরাপির উপকারিতা সম্পর্কে বিভিন্ন গবেষণা ইতিবাচক মতামত দিয়ে আসছে। এই ইতিবাচক ভাবমূর্তির পেছনে মূল কারণ মাংসপেশি ও জয়েন্টের অচলাবস্থা কাটাতে এর কার্যকরিতা। এর পাশাপাশি, এই পদ্ধতির প্রয়োগে আক্রান্ত স্থানে রক্ত চলাচল বৃদ্ধিপায় এবং ওই স্থানের বর্জ্য নিষ্কাশন করার মাধ্যমে সফট টিস্যুগুলো সেরে উঠতে সাহায্য করে।

ম্যানুয়াল থেরাপি প্রদাহ সারিয়ে তুলতে পারে। ফলে শরীর নিজে নিজে সুস্থ হয়ে উঠতে শুরু করে এবং রোগী দ্রুত আরামবোধ করে। এটি ভবিষ্যতে ইনজুরির ঝুঁকি থেকেও আপনাকে রক্ষা করবে।

কোথায় নেবেন ম্যানুয়াল থেরাপি

ম্যানুয়াল থেরাপি মানে ডলা-ডলি নয়। যে কেউ এটি দিয়ে রোগীকে সুস্থ করে তুলতে পারবে না। একজন বিপিটি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কোন সমস্যায় কোন থেরাপি নিতে হবে। যত্র তত্র গজিয়ে ওঠা ফিজিওথেরাপি সেন্টারে ভুয়া ফিজিওথেরাপিস্টের পক্ষে এটা সম্ভব নয়। তারাই মূলত ম্যানুয়াল থেরাপির নামে ডলা-ডলি করে রোগীর পকেট হাতিয়ে নেয়। সুতরাং মনে রাখবেন আপনি যেখানে চিকিৎসা নিতে যাবেন সেখানে যেন বিপিটি ফিজিওথেরাপিস্ট থাকেন।

পরিশেষে বলতে চাই, এই থেরাপি অত্যন্ত কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি। একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন রকম ম্যানুয়াল থেরাপির মাধ্যমে তার মুনশিয়ানা দেখাতে পারেন। ফিজিওথেরাপি নিয়ে যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে কল করুন আমার হেল্প লাইনে অথবা মেসেজ ইনবক্সে। ধন্যবাদ এতক্ষণ ধরে আমার লেখাটি পড়ার জন্য।

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।